সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ও শুভ জন্মাষ্টমী আজ।

 



আজ সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ দিন - ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী। এটি শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন, যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক অত্যন্ত পবিত্র ও আনন্দের দিন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, বা জন্মাষ্টমী, প্রতি বছর ভাদ্রপদ মাসের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয়। এই দিনটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ও তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক উদযাপনের একটি উপলক্ষ্য।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মের ঐতিহাসিক পটভূমি:

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল দুষ্ট রাজা কংসের অত্যাচারের সময় মথুরায়। রাজা কংসের দুঃখজনক ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী, তার বংশধর তাকে হত্যা করবে। তাই কংস তার সমস্ত নবজাতকদের হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছিল। তবে, যশোদা ও নন্দের পুত্র শ্রীকৃষ্ণকে কংসের হাত থেকে রক্ষা করতে, তাঁকে গোপনে বৃন্দাবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের উদ্দেশ্য ছিল দুষ্টের দমন এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠা। তাঁর জন্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে ন্যায় ও সত্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়।

জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য:

জন্মাষ্টমী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতির দিন। এটি শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের জন্মের স্মরণ নয়, বরং জীবনের উদ্দেশ্য ও আদর্শের প্রতি ফিরে আসার একটি সুযোগ। শ্রীকৃষ্ণের জীবনের ঘটনাবলি, যেমন কংসের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই, রাজকীয় জীবন ত্যাগ, এবং ভগবত গীতা উপদেশ, ভক্তদের জন্য অনুপ্রেরণা সরবরাহ করে।

জন্মাষ্টমীর প্রস্তুতি:

জন্মাষ্টমী উদযাপন শুরু হয় বহু দিন আগে থেকেই। মন্দিরগুলো শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর জন্য বিশেষভাবে সাজানো হয়। ভক্তরা ঘরোয়া পূজা আয়োজনের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেন। তারা বিভিন্ন পুণ্য কর্ম যেমন উপবাস, জপ, এবং ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করেন।

এছাড়া, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর দিন সকালে মন্দিরে বিশেষ পূজা ও অর্চনার আয়োজন করা হয়। পূজা-অর্চনার জন্য মন্দিরের বাইরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি বা চিত্রে ফুল ও তেল প্রদান করেন। বিশেষ ধ্যানে ও প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন। এই দিন বিশেষ ধরনের ভজন-কীর্তন, ধর্মীয় আলোচনা এবং নাটকীয় মঞ্চস্থ হয়।

জন্মাষ্টমীর উৎসবের প্রধান অংশ:

জন্মাষ্টমীর প্রধান অংশ হলো উপবাস ও কীর্তন। এই দিন ভক্তরা সাধারণত দিনভর উপবাস রাখেন এবং রাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময়ের দিকে বিশেষ পূজা করেন। মন্দির ও ঘরে ঘরে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের নানা রূপের পূজা করেন। এদিন অনেক মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের জীবনের নানা ঘটনা মঞ্চস্থ হয়।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর রাতে, বিশেষ করে দ্বাদশী রাতের সময়, ভক্তরা ‘নগর কীর্তন’ নামে পরিচিত মিছিল বের করেন, যা শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে চলে। এই মিছিলের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের জীবন ও লীলার বিভিন্ন দৃশ্য অভিনীত হয়।



আধ্যাত্মিক মূল্য:

শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রীকৃষ্ণের জীবন ও উপদেশ ভক্তদের জীবনে মূল্যবান শিক্ষার উৎস। শ্রীকৃষ্ণের গীতায় তিনি মানব জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন, যেমন ধ্যান, কর্ম, এবং ভক্তি।

শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা অনুসরণ করে, ভক্তরা জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপন তাদের জীবনে শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ অনুসরণের প্রেরণা জোগায়।

আজকের দিন:

আজকের দিনটি সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ এবং আনন্দময় দিন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করে, ভক্তরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রেম প্রকাশ করেন। তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের দয়া ও আশীর্বাদ লাভের জন্য প্রার্থনা করেন এবং তাঁর শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন।

জন্মাষ্টমী উদযাপন আমাদের শেখায় যে, সঠিক পথ অনুসরণ করে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চললে জীবনে প্রকৃত সুখ এবং শান্তি লাভ করা সম্ভব। তাই, এই শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আমরা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি জানাই এবং তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করি।



#জন্মাষ্টমী

#শ্রীকৃষ্ণ

#ভগবানশ্রীকৃষ্ণ

#শ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমী

#সনাতনধর্ম

#হিন্দুউৎসব

#জন্মাষ্টমীরউৎসব

#ধর্মীয়উৎসব

#শ্রীকৃষ্ণপূজা

#হিন্দুউৎসব

Previous Post Next Post