![]() |
| ২০২৪ বিশ্ব শিক্ষক দিবস |
ভূমিকা
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ৫ অক্টোবর, ২০২৪ সালে উদযাপিত হতে যাচ্ছে, এবং বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন—জাতীয়করণের দাবি—পুনর্ব্যক্ত করতে প্রস্তুত। শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকা সত্ত্বেও, এই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো সমান নয়। এ কারণে, তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য জাতীয়করণ এক সময়োপযোগী জীবন মরণের দাবি হয়ে উঠেছে।
শিক্ষকের মর্যাদা এবং বর্তমান বাস্তবতা
বাংলাদেশে শিক্ষককে জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমান পেক্ষাপটে উক্ত উক্তিটি ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। তাঁর কারণ যারা কারিগর বা যে যন্ত্র পণ্য উৎপাদন করে তার পিছনে আমরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকি । কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা আজও বিভিন্ন আর্থিক ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় তারা বেতন, পেনশন, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে, তাদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তা বেড়ে চলেছে, যা শিক্ষার মানের ওপরও প্রভাব ফেলছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয়করণ দীর্ঘদিনের দাবি। এ দাবির পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
০১। আর্থিক নিরাপত্তা: বেসরকারি শিক্ষকরা সরকারি শিক্ষকদের মতো স্থায়ী বেতন এবং অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জাতীয়করণ হলে তারা সরকারি শিক্ষকদের মতো নির্দিষ্ট মাসিক বেতন, পেনশন এবং অন্যান্য সুবিধা পাবেন।
০২। সমান সুযোগ: শিক্ষকদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জাতির উন্নতির জন্য অপরিহার্য। জাতীয়করণের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকরাও সরকারি শিক্ষকদের মতো প্রশিক্ষণ এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ পেতে পারেন।
০৩। প্রতিভা ধরে রাখা: অনেক প্রতিভাবান শিক্ষক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হন। যোগদানের পর এমপিও ভূক্ত হবার পর কয়েক মাস অতিবাহিত হলে অর্থনৈতিক চিন্তায় একজন শিক্ষক মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েন। জাতীয়করণ হলে তারা শিক্ষা পেশায় আরও মনোযোগী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারেন।
যদিও জাতীয়করণ একটি প্রয়োজনীয় দাবি, এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
০১।. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমাঃ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জাতীয়করণের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো তাদের আয়ের উৎস এবং এই আয় সরকারি কোষাগারে জমা করা। অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালন ব্যয় এবং শিক্ষকদের বেতন শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত বেতন এবং অন্যান্য ফি থেকে মেটায়। জাতীয়করণের পর এই আয় সরকারি কোষাগারে জমা হলে, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বতন্ত্রতা কমে যাবে এবং সরকারি নীতিমালার ওপর তাদের নির্ভরশীলতা বাড়বে। তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সরকারকে কঠোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
০২। স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক পরিবর্তন: বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নিজস্ব ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও স্বাধীনতার অধীনে পরিচালিত হয়। জাতীয়করণের ফলে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নীতিমালার অধীনে চলে আসবে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনবে।
০৩। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি: জাতীয়করণের দাবিকে অনেক সময় রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে দেখা হয়, যা শিক্ষকদের মূল দাবিকে আড়াল করে দিতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এই দাবির যথাযথ মূল্যায়ন এবং সমাধান প্রয়োজন।
২০২৪ সালের বিশ্ব শিক্ষক দিবসে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের দাবি পূরণের জন্য সরকার ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন। এ দিবসে তারা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য জাতীয়করণকে একমাত্র সমাধান হিসেবে তুলে ধরবেন। তাদের দাবি হলো, সরকার যেন শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করে এবং জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে সমতা ও মানোন্নয়ন নিশ্চিত করে।
জাতীয়করণের দাবি পূরণ করতে হলে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য নিচের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
০১। বাস্তবায়ন: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্রতা থেকে বাঁচিয়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহোদয়ের সামনে আরো একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করণ। জাতীয়করণ সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মানসিক চিন্তা মুক্তিতে অবদান রাখবেন।
০২। বাজেট বরাদ্দ: সরকারকে শিক্ষা বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে, যাতে জাতীয়করণে আর্থিক সমস্যা সৃষ্টি না হয়।
০৩। জনমত গঠন: সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষকদের জাতীয়করণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে এই প্রচার কার্যক্রম চালানো যেতে পারে।
জাতীয়করণ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য শুধু একটি দাবি নয়, এটি তাদের ন্যায্য অধিকার। ২০২৪ সালের বিশ্ব শিক্ষক দিবসে তারা এই দাবি আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করবেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই দাবি পূরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার, সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু করা।
#জাতীয়করণ
#শিক্ষকদিবস২০২৪
#বেসরকারিশিক্ষা
#শিক্ষকরদাবি
#বাংলাদেশশিক্ষাব্যবস্থা
#শিক্ষাক্ষেত্র
#শিক্ষকজাতিগড়ারকারিগর
#শিক্ষাব্যবস্থারউন্নয়ন
#শিক্ষারসমতা
#শিক্ষাবিদদেরআন্দোলন
